চট্টগ্রামে ডিএনএস স্যালাইনের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। নগরীর ওষুধের দোকানগুলোতে স্যালাইন মিলছে না। এতে বিপাকে পড়েছে রোগীরা। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ৬৭ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে। ডেঙ্গুর প্রসারের সুযোগ নিয়ে ওষুধ কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট চক্র স্যালাইন নিয়ে কারসাজি শুরু করে। এতে করে শুধু ডেঙ্গু রোগীই নয়, একই সাথে সার্জারি, সিজার, ডায়ালাইসিসসহ বিভিন্ন রোগীকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, দেশে একাধিক ওষুধ কোম্পানি স্যালাইন উৎপাদন করে। সাধারণ এসব স্যালাইনের বাজার মূল্যও খুব বেশি নয়। আধা লিটার স্যালাইন ৪৫/৫০ টাকা এবং এক লিটারের স্যালাইন ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতো। স্যালাইনের গায়ে এই মূল্য আরও কম লেখা রয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগের বিস্তারে হঠাৎ করে এই স্যালাইনের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এক লিটার স্যালাইন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টাকা দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না ফার্মেসিগুলোতে। বুধবার একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারের কোথাও স্যালাইন নেই। টাকা দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না।
ফার্মেসি মালিকরা জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইনের সরবরাহও কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের জানিয়েছেন বর্তমানে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি। এ কারণে স্যালাইনের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
একাধিক ফার্মেসি মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো স্যালাইন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ১০০টি স্যালাইন চাইলে ৫ থেকে ১০টি দিচ্ছে। তাও আবার শর্ত হিসেবে ওরস্যালাইন কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব কোম্পানির ওরস্যালাইনের কিনলেই কেবল ৫/১০টি সাধারণ স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে এসব কোম্পানির উৎপাদিত ওরস্যালাইনের কোন চাহিদাই বাজারে নেই। এগুলো বিক্রিও হয় না। ওরস্যালাইন না কেনায় আমাদেরকে সাধারণ স্যালাইন দেয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ বিক্রি হবে না জেনেও ওরস্যালাইন কিনে বাড়তি দরে সাধারণ স্যালাইন বিক্রি করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে। যারা ওরস্যালাইন কিনছে না কোম্পানি তাদের সাধারণ স্যালাইন দিচ্ছে না। ফলে নগরীর শত শত ফার্মেসিতে সাধারণ স্যালাইনের এক কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বৃহত্তম ওষুধের পাইকারি বাজার হাজারী গলির ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদ্য বিদায়ী সভাপতি সফিউল আজম বলেন, যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, ফার্মেসিগুলো কোম্পানি থেকে সেই পরিমাণ স্যালাইন পাচ্ছে না। এ কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে অর্থ জরিমানা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে স্যালাইন আছে। আমরা অভিযান পরিচালনা করলে দোকানে স্যালাইন পাই। কিন্তু সাধারণত ক্রেতারা কিনতে গেলে নেই বলছে, আবার বাড়তি দাম দিলে পাওয়া যায়।’
তবে সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে স্যালাইন সরবরাহ আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত বলেন, ‘আমরা রোগীদের স্যালাইন দিচ্ছি। বেশি না পেলেও চাহিদা মেটানোর মতো স্যালাইন আমাদের আছে।’
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে সরবরাহ পাচ্ছি। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’